জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণা হবে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। মামলায় তার কী সাজা হতে পারে, তা জানতে রায়ের জন্য অপেক্ষায় আছেন সবাই। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামানের বিশেষ আদালতে বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা হওয়ার কথা।
ইতোমধ্যে রায়কে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ এনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী দাবি করেছেন, তাদের ১৩শ’ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কোনও নাশকতা না হয়, সেজন্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবেও বিষয়টির সতর্ক পর্যবেক্ষণে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা প্রস্তুত। দেশের জনগণ বিশৃঙ্খলা পছন্দ করে না। জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না।’
আর একবিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘কেউ শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সহিংসতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন। তার বড় ছেলে তারেক রহমানও এ মামলার আসামি, যিনি মুদ্রা পাচারের দায়ে সাত বছর কারাদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এছাড়া, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন। সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
প্রসঙ্গত, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। অভিযোগে বলা হয়, এতিমদের জন্য আনা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেছেন বার বার। তার অনাস্থার কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিন বার এ মামলার বিচারক বদল হয়েছে। এদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় দেখা গেছে, বাইরে অতিরিক্ত কারারক্ষীরা টহল দিচ্ছে। কারাগারের প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা চেকপোস্ট। জেলা প্রশাসনের অনুরোধে বিভিন্ন জেলায় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসিন রেজা।
এদিকে, ৮ ফেব্রুয়ারির রায়ে সাজা হলেই যে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য হবেন, বিষয়টি এমন নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। সংবিধান অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনও ব্যক্তির দুই বছরের বেশি সাজা হলে এবং ওই সাজা ভোগের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনও ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ-সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি… (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুবছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।’
সংবিধানের এই বিধির ব্যাখ্যা দিয়ে আইনজ্ঞরা বলেছেন, আদালতে দুবছর বা তদুর্ধ সময় সাজা হলে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না—এটা যেমন সত্য, তেমনই নিম্ন আদালতের কোনও রায়ই চূড়ান্ত নয়,সেটাও সত্য।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কারও দুবছর বা তার বেশি সময় সাজা হয় এবং আপিল করা হলে ওই সাজা যদি বহাল থাকে, তাহলে তিনি সাজা ভোগের পাঁচ বছরের আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
সাবেক এই আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হন এবং তারপর আপিল করেন, তখন ওই সাজা স্থগিত থাকে। একইসঙ্গে ওই ব্যক্তি যদি জামিনে থাকেন, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন।
Leave a Reply