আল হাছিব তাপাদার:: জকিগঞ্জের সর্দারখাঁ খাল পূণঃ খনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকার জনস্বার্থ ও উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বিএডিসি সেচ বিভাগ। কৃষক কুলে বইছে খুশির জোয়ার। কৃত্রিম বন্যা থেকে রক্ষা পাবেন উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের লোকজন। কৃষিক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবের সম্ভাবনা।
জকিগঞ্জের মানিকপুর ইউনিয়নের এওলাসার মৌজায় অবস্থিত খালটি খননে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সিলেট অঞ্চলের সেচ বিভাগ ২৮ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬শত ২৫ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে বাস্তবায়িত করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৩ কিলোমিটার মাটির কাজ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পরে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা।
এলাকার লোকজন জানান, স্বাধীনের বহু আগে খালটির খনন করা হয়েছিলো। এরপর আর খনন কাজ হয়নি। এ কারণে পলি মাটিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে নদীরমত বিশাল খালটি ভরাট হয়ে যায়। এতে উপজেলার মানিকপুর, কসকনকপুর, সুলতানপুর ও বারঠাকুরী ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হতো। সামান্য বৃষ্টি হলেই কৃত্রিম বন্যায় হাজার হাজার একর কৃষি জমিসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যেত। লোকসানের কবলে পড়তেন কৃষকরা। অনেক কৃষক লোকসান গুনতে গুনতে হাওরে চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এতে প্রতিবছর হাজার হাজার একর ভূমি অনাবাদ থেকে যেতো।
এলাকার লোকজন আরও জানান, ৪টি ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে খালটি খননের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সিলেট অঞ্চলের সেচ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএডিসি খালটি খননে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ কিলোমিটার মাটি কাজ করেছে। এর ফলে কৃত্রিম বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কৃষকরা হাওরে চাষ করতে উৎসাহী হবেন। আগের মত আর লোকসান গুনতে হবেনা।
মানিকপুর, কসকনকপুর, সুলতানপুর ও বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চারজন চেয়ারম্যান পৃথকভাবে জানিয়েছেন, খালটির খনন কাজ করায় অন্তত ৮ হাজার একর জমিতে নতুনভাবে বোরো ও আমন ফসল উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর নৌ চলাচলের পথ সৃষ্টি হবে। কৃষকরা ধান চাষ করে নৌ পথ ব্যবহার করে সহজেই ঘরে ফসল তুলতে পারবেন। এতে খরচও অনেকটা কমবে। লাভবান হবেন কৃষকরা।
বিএডিসি সেচ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রণজিৎ কুমার দেব জানিয়েছেন, শুস্ক মৌসুমে এ খালের পানি ব্যবহার করে হাওরে বোরো ফসলসহ শীতকালীন শাক সবজি উৎপাদিত হবে। প্রকল্পটির কাজ শেষে জকিগঞ্জের কৃষিক্ষেত্রে অনেকটা পরিবর্তন আসবে। সর্দার খাঁ খালকে নৌপথ হিসেবে ব্যবহার করে কৃষকরা কম খরচে ফসলও ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
সর্দারখাঁ খাল কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির প্রকল্প চেয়ারম্যান হাতিডহর গ্রামের মাষ্টার আজিজুল বারী, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগামী এক বছরের মধ্যে কৃষি বিপ্লবে এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। এভাবে যদি পার্শ্ববর্তী পলি ভরাট জাড়া খাঁলটি খনন করা হয় তাহলে ধান উৎপাদনে জকিগঞ্জের হাওর অঞ্চল আরোও একধাপ এগিয়ে যাবে। ইতিপূর্বে বিএডিসি জকিগঞ্জের সাদিখাল ও এওলাসারী গোপাট খনন কাজ করেছে। এতে ব্যাপক সুফল এসেছে। সর্দারখাঁ খাল খননের প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হওয়ার পর অকল্পনীয় সুফল ভোগ করা যাবে।
Leave a Reply