শাকিবের কাছে থেকে পাওয়া কোনটা ‘ভালোবাসা ‘ আর কোনটা প্রতারনা’ সেসবের হিসেব নিকেশ মিলিয়ে অবিশ্বাসের ঘোর কাটাতে সময় চান অপু বিশ্বাস !
শাকিবের ঘনিষ্ঠ জনেরা দাবি করছেন, অপু শাকিবকে স্বামী হিসেবে দাবি করলেও স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যে দায়িত্ব তা কখনোই পালন করেনি তিনি। কোনো বিষয়ে স্বামীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি অপু। উল্টো টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে শাকিবের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগও রয়েছে।
কিন্তু শাকিবের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ থাকলেও বাস্তবে অপু সব সময়ই শাকিবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। এমনটাই দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে ।
ভারতের হায়দরাবাদের রামুজি ফিল্ম সিটিতে এখন রাশেদ রাহা পরিচালিত ‘নোলক’ ছবির শুটিং করছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। সেখানে যাওয়ার আগে গত ২২ নভেম্বর অপু বিশ্বাসকে পাঠানো তালাকের নোটিশে তিনি স্বাক্ষর করেন। গত সোমবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে মুঠোফোনে শাকিব খান জানান, ‘আমি স্বাক্ষর করে দিয়ে এসেছি। এখন থেকে এ বিষয়ে যা কিছু বলার, আমার আইনজীবী বলবেন। আমি এখন শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছি। এরই মধ্যে নতুন কয়েকটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। প্রযোজক আর পরিচালকদের এই কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করে দিতে চাই।’
ছেলে আব্রাম খান জয় প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, ‘সে তো আমারই সন্তান। আমার সন্তানের ভালোর জন্য যা যা করার দরকার, আমি অবশ্যই তা করব।’
ভালোবাসার টানে ধর্ম পাল্টালেও নিজের নাম পাল্টাননি অপু। এখনও পর্যন্ত তার নাম ‘অপু বিশ্বাস’ রেখেছেন বিভিন্ন স্থানে। যদিও বিয়ের সময় ধর্ম পাল্টে মুসলমান হিসেবে তার নাম রাখা হয়েছে ‘অপু ইসলাম খান’।
এমন জগাখিচুড়ির পেছনে কারন হিসেবে অপুর দাবী, শাকিবের কারণেই তার নাম অপু ইসলাম খান বলে প্রকাশ করতে পারেননি তিনি। কারণ বিয়ের ব্যাপরটি ৮ বছর ও জয় গর্ভে আসার পর থেকে টিভি চ্যানেলে তা প্রকাশ করা পর্যন্ত দেড় বছর শাকিবের নির্দেশে বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছে। তাছাড়া আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় ‘অপু বিশ্বাস’ নাম রয়ে গেছে। এসব বদলাতে তো সময়ের দরকার।
অন্যদিকে, অপু জানিয়েছেন, তিনি তখন পর্যন্ত তালাকের নোটিশ হাতে পাননি। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘দুপুরে আমি বাবুকে (আব্রাম খান) খাওয়াচ্ছিলাম। হঠাৎ টেলিভিশনের স্ক্রলে খবরটি আমার নজরে আসে। এরপর মুঠোফোনে পরিচিতজনের কয়েকটি খুদে বার্তাও পেয়েছি। বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে।’
তালাকের নোটিশ পাঠানোর বিষয়টা অপুর কাছে এখনো অবিশ্বাস্য। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
অপু জানান, ভুল বোঝাবুঝির ঘটনার কয়েক দিন পর অপু ছেলেকে নিয়ে শাকিবের বাসায় যান। অপু বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে অনেক আন্তরিকভাবেই কথা হয়েছে। বাবু (আব্রাম খান) তার বাবার (শাকিব) সঙ্গে রাতে ঘুমিয়েছে। তখন শাকিবকে একজন দায়িত্ববান বাবা মনে হয়েছে আমার কাছে। মূলত তখন থেকেই স্ত্রী-সন্তানের প্রতি শাকিবের মধ্যে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছি। এখন এসব খবর তো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’
গত মাসে ছেলেকে রেখে চিকিতসা নিতে ভারতে যাওয়ার কারণে শাকিব খানের সঙ্গে আমার ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি হয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় সে হয়তো রাগ হয়ে কিছু একটা করে থাকতে পারে। কিন্তু তার কয়েক দিনের মাথায় আমার সঙ্গে শাকিবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর এখন পর্যন্ত তা রয়েছে।’
নিজের ফেসবুক পেজে সবশেষ স্ট্যাটাসে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ রেখে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমাকে একটু সময় দিন। আমি ব্যাপারগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
মঙ্গলবার বিকেলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাংবাদিকদের উদ্দেশে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আপনারা ২০০৫ সাল থেকে আজ অবধি আমার পাশে ছিলেন। আমার ভালো সময় ও খারাপ সময়ে আপনাদের পাশে পেয়েছি। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ, আমি আপনাদের অনেক শ্রদ্ধা করি। সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আপনারা আমাকে পাচ্ছেন না বলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাকে একটু সময় দিন, আমি ব্যাপারগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
স্ট্যাটাসের শেষে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘যারা আমার বক্তব্য না নিয়ে খবর প্রচার করছেন, তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, প্লিজ, আমাকে একটু সময় দিন। খুব তাড়াতাড়ি আমি আপনাদের সামনে আমার বক্তব্য তুলে ধরব। ধন্যবাদ সবাইকে…।’
এর আগে দুপুরে শাকিব খানের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২২ নভেম্বর শাকিব খান তাঁর চেম্বারে যান। অপুকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর কাছে আইনি পরামর্শ নেন। এরপর শাকিবের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়রের কার্যালয়, অপু বিশ্বাসের ঢাকার নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায় ওই তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়। এই তালাক কার্যকর হবে নোটিশ পাঠানোর তারিখ থেকে তিন মাস পর। এই আইনজীবী বলেন, বিয়ের দেনমোহর বাবদ সাত লাখ টাকা অপুকে পরিশোধ করবেন বলে শাকিব তাঁকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি একমাত্র সন্তান আব্রাম খান জয়ের ভরণপোষণের যাবতীয় খরচসহ দায়দায়িত্ব নিজে বহন করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে শাকিব-অপুর জুটি গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালে তাদের বিয়ে হয়। গতবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তাদের পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সেসব তারা আড়ালেই রেখেছিলেন।
অপু গত এপ্রিলে সন্তান কোলে টেলিভিশন লাইভে এসে সেই খবর প্রকাশ করলে বিষয়টি নাটকীয়তার জন্ম দেয়। শাকিব খান এ নিয়ে শুরুতে বিভিন্ন রকম কথা বললেও পরে তাদের মধ্যে মিটমাট হয়ে যায়।
বিয়ের খবর প্রকাশের ৯ মাসের মাথায় ভাঙতে চলেছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এ জুটির সম্পর্ক।
Leave a Reply