নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়া সিলেটের জকিগঞ্জের ৯টি ইউপির ভোটগ্রহণে নানা অনিয়ম ও কারচুপির বর্ণনা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন জকিগঞ্জের একটি ইউপির চার সদস্য পদপ্রার্থী। বুধবার বিকেলে ঢাকাস্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে সুলতানপুর ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী বর্তমান মেম্বার মনির উদ্দিন, সাবেক মেম্বার আব্দুস সাত্তার, ৪নং ওয়ার্ডের প্রার্থী আরিফ আহমদ, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী সামসুল ইসলাম ইসলাম লেইছ এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তাঁরা পুণনির্বাচন চেয়ে ভোটের দিনের নানা অনিয়ম, কারচুপি ও অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন, রির্টানিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীব ও রির্টানিং কর্মকর্তা আরিফুল হক বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রার্থীকে পাস করিয়ে দিতে চুক্তি করেছিলেন। ভোটের দিন সকালে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্ধারিত ব্যালেট পেপার না দিয়ে কম ব্যালেট দেন। পরে এই দুই রির্টানিং কর্মকর্তা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ব্যালেট পেপার পৌঁছে দেয়ার নামে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কক্ষে ১০/১৫ মিনিট দরজা বন্ধ করে সীল মারা ব্যালেট পেপার বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। এ সময় প্রার্থী ও ভোটাররা প্রতিবাদ করলেও উল্টো তারা রোষানলে পড়েন। রির্টানিং কর্মকর্তারা চুক্তিকৃত ইউপির ব্যালেট সরবরাহের একপর্যায় ভোটের দিন বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে কাজলসার ইউপির মরিচা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালেট ঢুকানোর চেষ্ঠা করেন। তখন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা ম্যজিস্ট্রেট সিলেট, জেলা পুলিশ সুপার সিলেট ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন। এ সময় তাদের ব্যবহৃত কালো রঙের ঢাকা মেট্রোÑঠ ১৩-৭০২৮ গাড়ী থেকে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতীকে সীল মারা ৪শ ব্যালট পেপার, সীল ছাড়া ৪শ, ইউপি সদস্য প্রার্থীর সীলমারা ৪শ ব্যালেট, সীল ছাড়া ৪শটি এবং মুড়ি বই মোট ৮টি, ব্যালট বাক্সের সিলগালা লক ৮ টি, ফেন্সিডিলের একটি খালি বোতল, নগদ ১লাখ সাড়ে ২১ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। পরে সাথে সাথে কাজলসার ইউপির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এরআগে সুলতানপুর ইউপির গণিপুর ভোটকেন্দ্রে সীল মারা ব্যালেট পেপার ঢুকানোর প্রতিবাদে ভোটাররা বিক্ষোব্ধ হয়ে ব্যালেট বাক্স পুকুরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ঐ ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণও স্থগিত করা হয়। রির্টানিং কর্মকর্তারা সীল মারা ব্যালেট পেপারসহ গ্রেফতার হবার পরপরই উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের প্রার্থী ও ভোটাররা ভোটগ্রহণ স্থগিতের দাবী জানিয়ে প্রতিবাদে উতপ্ত হয়ে উঠেন। কিন্তু এরপরও ভোটগ্রহণ স্থগিত না করে প্রশ্নবিদ্ধ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীদেরকে ফলাফলের কপি রোববার বিকেল পর্যন্ত দেয়া হয়নি। অনিয়ম ও ত্রুটিপূর্ণ কাস্টিং ভোটের এ ফলাফল প্রকাশ বেআইনী, অবৈধ, ভিত্তিহীন এবং জনগণের প্রদত্ত ভোটের প্রতিফলন নয় বলে তাঁরা দাবী করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ভোটের আগে প্রার্থীদেরকে রির্টানিং কর্মকর্তা অফিসে ডেকে নিয়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবী করে বিজয়ী করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁরা রির্টানিং কর্মকর্তার সেই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ার কারণে অন্য প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে জনগনের ভোটাধিকার হরণ করে তাদেরকে পরাজিত করা হয়। রির্টানিং কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রে যাবার পরপরই ভোটগ্রহণে ধীরগতি হয়। অনেক ভোটার দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে না পেরে ফিরে যান। এরপরও কাস্টিং ভোটের সংখ্যা বেশি হয়। অনেক ভোটকেন্দ্রে ব্যালেট পেপার গণনার সময় নকল সীলযুক্ত ব্যালেটও দেখা গেছে। ভোটগ্রহণের পরদিন সুলতানপুর ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণগ্রাম ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষের পিছন থেকে ব্যালেট পেপার পাওয়া যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে প্রার্থীদের দাবী, প্রশ্নবিদ্ধ, বির্তকিত ও প্রভাবমূলক এই ভোটের ফলাফল বাতিল করে পুণরায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ করে ভোটের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সুলতানপুর ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আব্দুছ ছাত্তার জানিয়েছেন, তিনিসহ কয়েকজন প্রার্থী ভোটের দিনের নানা অনিয়ম, কারচুপি, অসঙ্গতির বর্ণনা দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনের অবৈধ, ভিত্তিহীন ফলাফলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। বির্তকিত এ ফলাফলের কোন বৈধতা নেই। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারীর ইউপি নির্বাচনের দিনে ব্যালেট পেপার, সরঞ্জাম, ফেন্সিডিলের খালি বোতল ও গাড়ীসহ সহ গ্রেফতার হন দুই রির্টানিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীব ও আরিফুল হক। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বর্তমানে রির্টানিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীব কারাগারে থাকলেও অপর রির্টানিং কর্মকর্তা আরিফুল হক অসুস্থ হয়ে পড়ায় সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
Leave a Reply