নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: জকিগঞ্জে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে। তবে স্থানীয় মেম্বারসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর চাপ সৃষ্টির কারণে তা তাৎক্ষণিক প্রকাশ করেনি নির্যাতিতার পরিবার।
পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গত সোমবার রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে স্থানীয় জোবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে ঘরের বাইরে বের হলে পাশের বাড়ির মৃত আকতার আলীর ছেলে সালমান আহমদ (১৮) সহযোগীদের সহযোগীতায় বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে অচেতন অবস্থায় আবার সালমানের বাড়ির লোকজন মেয়েটিকে এনে দেয়। এ ঘটনার পরপরই বিষয়টি গোপন রাখতে চাপ সৃষ্টি শুরু করেন ঐ গ্রামের মেম্বারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। তারা নির্যাতিতার পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধাঁ দিয়ে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্ঠা চালান। এ নিয়ে ঐ প্রভাবশালীরা একাধিকবার নির্যাতিতার পরিবারকে ডেকে নিয়ে বিচারের নামে উল্টো ঐ নির্যাতিতার বোনের জামাইকে মারধর ও হয়রানী করেন।
নির্যাতিতার মা ও বাবাসহ তাদের বাড়ির মহিলারা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনা ঘটার পর সেনাপতিরচক গ্রামের মৃত ফজই মিয়ার ছেলে হেলাল আহমদ, স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য সামছুল হক, রারাইগ্রামের মৃত আব্দুল জলিল টরইর ছেলে হাফিজ খালেদ ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্ঠা কওে বিচার করে দিতে চান। প্রভাবশালীদের ভয়ে তাৎক্ষণিক তারা মুখ খোলেননি। কিন্তু মেয়েটির অধিক রক্তক্ষরণের কারণে পরে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করান। এতে ঐ প্রভাবশালীরা ক্ষেপে গিয়ে নির্যাতিতার বোনের জামাইকে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যর বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। পরে আবার প্রভাবশালীরা ধর্ষকের পরিবার দিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দায়েরও করিয়েছে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মা, বাবা ঘটনায় জড়িতসহ ধামাচাপায় জড়িতদের বিচার চেয়ে আরও বলেন, গরীব বলে বিচার পাচ্ছেন না। শুধু প্রভাবশালীদের কথা না মেনে মেয়েকে হাসাপাতালে পাঠানোর কারণে এখন বিচারের বদলে তারা উল্টো হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। প্রভাবশালীদের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। প্রভাবশালীরা তাদেরকে দেখে নেবারও হুমকিও দিয়েছেন। হেলাল ও খালেদ খুবই প্রভাবশালী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের কথায় চলে বলে নির্যাতিতার বাবা মায়ের দাবী।
এদিকে, স্কুলছাত্রী ধরে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোব্ধ উয়ে উঠেছেন। তারা জড়িত লম্পট ও তার সহায়তাকারীসহ ধামাচাপায় জড়িতদের বিচার দাবী করেছেন।
এলাকার একাধিকজন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। যারা ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি, মামলা ও মারধর করেছে তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামসুল হক স্বীকার করে জানান, তিনি ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাননি। তবে তার বাড়িতে ঘটনাটি নিয়ে দুটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু নির্যাতিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কারণে আর কোন বৈঠক হয়নি। তিনি দাবী করেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন সেনাপতিরচক গ্রামের মৃত ফজই মিয়ার ছেলে হেলাল আহমদ ও রারাইগ্রামের মৃত আব্দুল জলিল টরইর ছেলে হাফিজ খালেদরা। বৈঠকে নির্যাতিতার পরিবারকে মারধর করা হয়নি জানিয়ে বলেন, নির্যাতিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। মেয়েটির পরিবারকে আইনী সহায়তা না দিয়ে কেন ধামাচাপার চেষ্টা ও হয়রানী করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে বলেন, যারা ধামাচাপা করতে চেয়েছিলো তারাই ভালো জানে কি কারণে নির্যাতিতার পরিবারকে হয়রানী করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম জানান, মেয়ের পরিবার অভিযোগ নিয়ে থানায় আসবে, কথা হয়েছে। যারা ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা ও নির্যাতিতার পরিবারকে উল্টো হয়রানী করছে তাদের কাউকেও ছাড় দেয়া হবেনা। থানায় ধর্ষকের পরিবার নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিয়েছে বলে জানা নেই।
Leave a Reply