আল হাছিব তাপাদার:: সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি ৮ প্রার্থীর শেষ সময়ের প্রচার-প্রচারণায় হাটবাজার, পাড়া মহল্লা সরগরম হয়ে উঠেছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হলেও কৌশলী অবস্থানে র্নিঘুম গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। সীমান্তঞ্চলে ভোটের আমেজে দিন-রাত সবই যেন সমান হয়ে পড়েছে। এ সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগ. জাতীয় পার্টি, বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টসহ ৮ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে রয়েছেন।
তাঁরা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি ও বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল), বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়ত নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ফয়জুল মুনির চেীধুরী (সিংহ), ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত এম এ মতিন চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনোনীত মো. শহিদ আহমদ চৌধুরী (হারিকেন), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. নুরুল আমিন (হাত পাখা), গণ ফোরাম মনোনীত মো. বাহার উদ্দিন আল রাজী (উদীয়মান সূর্য)।
এবারের নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনটিতে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মহাজোটের একক প্রার্থী থাকার কথা থাকলেও নানা নাটকীয়তা শেষে আওয়ামীলীগের ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের সাথে লড়ছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফয়জুল মুনির চৌধুরী। ২৩ দলীয় জোট থেকে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়লেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে গণফোরামের বাহার উদ্দিন আল রাজী উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে রয়েছেন। এরপরও আওয়ামীলীগ ও বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কবল থেকে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া। কিন্তু আসন ছাড়তে অনড় জাতীয় পার্টি। শেষ সময়ে মান অভিমান ভূলে নেতাকর্মীরা লাঙল মার্কাকে বিজয়ী করতে শেষ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আওয়ামীলীগ প্রার্থী ড. হাফিজ মজুমদার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন এ আসনের বর্তমান ও অতীতের এমপি থাকায় অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আওয়ামীলীগ প্রার্থী ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার ব্যক্তি হিসেবেও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তিনি জকিগঞ্জ-কানাইঘাটসহ বৃহত্তর সিলেটে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্ট দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। স্বাস্থ্য সেবায়ও ভূমিকা রয়েছে তাঁর। বিগত সময়ে সংসদ সদস্য থাকাকালে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন এ জন্য সকল মহলেই তিনি প্রশংসিত। ব্যক্তি হাফিজ আহমদ মজুমদারকে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ভালোবাসে। হাওর এলাকাসহ অনুন্নত এলাকায় মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে শিক্ষার আলো বিস্তারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার। নৌকা প্রতীকের জোয়ার ও হাফিজ মজুমদারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ আসন উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। নৌকা প্রতীকের ইমেজ ও হাফিজ মজুমদারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ এ আসনটি উদ্ধারে ভোটের মাঠে মরণ কামড় দিয়েছে।
এদিকে, সেলিম উদ্দিন বিগত ৫ বছর এমপি থাকাকালে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছেন। প্রভাব বিস্তার করে কাউকে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত করেননি। এ জন্য সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পান। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে জাতীয় পার্টির বড় একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। এ ভোট ব্যাংক ও উন্নয়ন, ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টি আসন ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ।
অন্যদিকে, এ আসনে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক এর আগে কয়েকবার নির্বাচন করেছেন। সে নির্বাচনগুলোতে তিনি নির্বাচিত হতে না পারলেও ইসলামপন্থী দলের নেতা হিসেবে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে তার দল জমিয়তের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরেও বিএনপি ও জোটের শরিকদলের ভোট ব্যাংক আছে। এ ভোট ব্যাংক কাজে লাগিয়ে তিনি বিজয়ী হতে প্রাণপন চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সংসদীয় আসনের দুটি উপজেলার মানুষ ধর্মভিরু হিসেবে ইসলামী দলের প্রার্থীর প্রতি তাদের দুর্বলতা রয়েছে। ১৯৯১ সালে এ আসন থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল হক উজিরপুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিগত সময়ের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইসলামপন্থী দলের প্রার্থীরা সম্মানজনক ভোট পেয়েছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকবেন।
ভোটের মাঠ ঘুরে জানাগেছে, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। সম্প্রতি সময়ে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনয়ন বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির, মনোনয়ন বঞ্চিত আইনজীবি মোস্তাক আহমদ তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামপন্থী দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জমিয়তের একাংশের নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কাকে সমর্থন করায় নৌকা পালে হাওয়া লেগেছে পুরো মতে।
জাতীয় পার্টিতেও ঐক্য গড়ে উঠেছে। মনোনয়ন বঞ্চিত শাব্বির আহমদ লাঙল মার্কাকে বিজয়ী করতে সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে ভোটের মাঠে দিনরাত পার করছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য শিল্পপতি এম জাকির হোসেইনও লাঙল মার্কাকে বিজয়ী করতে লন্ডন থেকে তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীদেরকে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন। কানাইঘাট এলাকায় ইসলামী দলের অনেক নেতা ইতিমধ্যে লাঙল মার্কার সভায় উপস্থিত হয়ে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এতে লাঙল মার্কা নিয়ে সেলিম উদ্দিন চমক দেখাতে কৌশলী ভূমিকা পালন করছেন। যেকোন মূল্যে ভোটের মাঠে টিকে থেকে সেলিম উদ্দিন বিজয়ের মালা পরবেন বলে জাপা নেতাকর্মীরা আশাবাদী।
বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর পক্ষে বিএনপিসহ ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা বিভেদ ভূলে মাঠে নেমেছেন। ইসলামীপন্থী নেতাকে বিজয়ী করতে নিরবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করে রেখেছে নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে শেষ মুর্হুতে ধানের শীষের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে জামায়াত। কিন্তু জামায়াত সমর্থন দিলেও ভোটের মাঠে নিরবতা পালন করছে এখনো। ধানের শীষের পক্ষে প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরের কোন নেতাকর্মীকে গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে জামায়াত প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে দায়মুক্তি নিয়েছে।
শেষ সময়ে আভাস পাওয়া গেছে, নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষের মধ্যে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। এ আসনে হেভিয়েট ৩ প্রার্থী ছাড়াও অন্য প্রতীকে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। কিন্তু ভোটের মাঠে সুবিধাজনক কাবু করতে পারেননি। সাধারণ ভোটারের আলোচনায়ও তাদের স্থান নেই।
ভোটারদের ধারণা, আওয়ামীলীগ প্রার্থী ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে শক্তিশালী অবস্থানে। তারা এ জোয়ার ভোটের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বিজয়ের মালা পরতে হবে অন্য প্রার্থীকে।
Leave a Reply