আল হাছিব তাপাদার:: জকিগঞ্জের বারহাল ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল সালাম সুবহান ও তার স্ত্রী রোকিয়া বেগমের বিভিন্ন অপকর্ম এবং অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবীতে বারহাল ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। বুধবার বিকেলে বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
বারহাল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা তালুকদার মিছবাহউজ্জামানের সভাপতিত্বে ও মাহফুজ আহমদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি সদস্য মাহতাব হোসেন চুনু মিয়া, মাস্টার এখলাছুর রহমান শিকদার, বিলাল হোসেন হিরু, শাহাবুদ্দিন, মেহেদী হাসান, শরীফ আহমদ, সাহেদ আহমদ, আব্দুল মালেক, জামাল আহমদ, কুটি মিয়া প্রমুখ।
সভায় বক্তারা আব্দুস সালাম সুবহানকে ইউপি সদস্য পদ থেকে দ্রুত অপসারন ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের কঠোর শাস্তির জোর দাবী জানিয়ে বলেন, ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম সুবহান ও তার স্ত্রী রোকিয়া বেগম বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। একাধিকবার আব্দুস সালাম সুবহানের স্ত্রী চুরিতে হাতে নাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছেন। আব্দুল সালাম তার স্ত্রীকে সকল অপকর্মে সহযোগীতা করে থাকেন। স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন অপকর্মে বৃহত্তর এলাকার লোকজনের মানসম্মান ভূলন্ঠিত হচ্ছে। কুরবানি ঈদের আগের দিন একজন মহিলার টাকা চুরির ঘটনায় আব্দুস সালামের স্ত্রী কানাইঘাট থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এরআগে চুরির ঘটনায় গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের হাতেও তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন।
এ ব্যাপারে ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল সালাম সুবহানের বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি চুরির কোনো ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমার স্ত্রী বিভিন্ন অপরাধ, অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার কারণে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তালাক দিয়েছি। বিষয়টি তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে দাবী করেন।
উল্লেখ্য, বারহাল ইউপির সদস্য আব্দুস সালাম সোবহান তার সুন্দরী স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নিয়ে একটি আন্তঃজেলা প্রতারক ও দুর্ধর্ষ মহিলা চোর চক্র তৈরী করে দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে শপিংমলে অভিনব কায়দায় মহিলা ও পুরুষদের পকেট মেরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পেশায় লিপ্ত ছিলো। টাকা চুরি করতে গিয়ে একাধিকবার ধরাও খেয়েছে। জেলও খেটেছেন। গত ২০আগস্ট পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সুন্দরী রোকিয়া বেগেম তৎপর হয়ে উঠেন। পকেট মারতে যান কানাইঘাট উপজেলার হাট বাজারগুলোতে। এরপর ধরা খেয়ে শ্রীঘরে হয় তার ঠিকান।
কানাইঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে রোকেয়া বেগম ও তার স্বামী আব্দুস সালাম ও চোর চক্রের সদস্যদের নিয়ে কানাইঘাট বাজারের পকেট মারতে যান। রোকেয়া আক্তারের সাথে ছিল নবম শ্রেনি পড়ুয়া এক মেয়েসহ আরো দুই মেয়ে। কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কান্দলা গ্রামের হারুন রশিদের স্ত্রী মিনারা বেগম (২৫) তার শ্বাশুড়ী মায়ারুন নেছা (৫৫) কে সাথে নিয়ে দুুপুর ১ টার দিকে সোনালী ব্যাংক কানাইঘাট শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা উত্তোলন করেন। এরপর মিনারা বেগম টাকাগুলো নিয়ে ব্যাংক সংলগ্ন একটি মুদির দোকানে কেনাকাটা করতে যান। এ সময় পেশাদার মহিলা চোর রোকেয়া বেগম মিনারা বেগমের সাথে সেই দোকানে ঢুকে কেনাকাটার নাম করে মিনারা বেগমের হাতে থাকা কাপড়ের ব্যাগ ব্লেড দিয়ে কেটে ১৯ হাজার টাকা নিয়ে কৌশলে দোকান থেকে ছিটকে পড়ে টাকা হাত বদল করে।
পরে কানাইঘাট থানা পুলিশ আটক রোকেয়া বেগমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। রোকিয়া বেগম চুরির ঘটনাকে অস্বীকার করে তার পরিচয় গোপন রেখে ভূল ঠিকানা দেন পুলিশকে। চালাক সুন্দরী রোকিয়া বেগমের কথাশুনে পুলিশও বুঝে উঠতে পারেনি কিছুই। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া বলেন, রোকিয়া বেগমকে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নানা ধরনের অভিনয় করতে থাকে। একপর্যায়ে সে পুলিশ কে জানায় তার বাড়ী বিয়ানীবাজারে। তার নাম শিমু, স্বামী আব্দুস সালাম সৌদি আরব থাকেন। কানাইঘাটে একটি ভাষায় তার তিন মেয়েকে নিয়ে এসেছিলো, আবার বলে কানাইঘাট বাজারে কেনাকাটার জন্য এসেছে এধরনের কথাবার্তা বলতে থাকে। পুলিশ ও থানায় উপস্থিত লোকজন রোকেয়া বেগমের অনেক কথা বিশ্বাস করেন। কিন্তু মিনারা বেগম অনড় তার ১৯ হাজার টাকা ঐ মহিলা চুরি করেছে। এক পর্যায়ে ওসি (তদন্ত) রোকেয়া বেগমের কথামতো বিয়ানীবাজার উপজেলার যে গ্রামের ঠিকানা দিয়েছিলো খোঁজ খবর নিয়ে জানতে তা ভূল ঠিকানা বলে প্রমাণিত হয়।
ওসি আরও জানান, রোকিয়া বেগম যে শিমু ও স্বামীর কথা বলেছে তা সঠিক আছে কিন্তু টাকার চুরির ঘটনায় আটক রোকেয়া বেগম লিলি বিয়ানীবাজারের সেই শিমু নয়, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সে পুলিশকে ধোকা দিতে চেয়েছিলো। পরে পুলিশ আটক রোকেয়া বেগম লিলির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় চুরির মামলা রয়েছে। তার স্বামী ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম সোবহানের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও চুরির মামলা রয়েছে। কয়েক মাস পূর্বে রোকেয়া আক্তার লিলি গোলাপগঞ্জ বাজারে একটি শপিংমলে ক্রেতাদের পকেট চুরির সময় হাতে নাতে আটক হয়। পরে তার বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা হয়।
অত্যন্ত চতুর রোকেয়া বেগম লিলি তার নাম পরিবর্তন করে একেক সময় একেক পরিচয় দেয়। তাদের বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
Leave a Reply